যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় প্রাণ গেল আরও ৯ বাংলাদেশির

করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে আবারও বাঙালি মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত তিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা কম থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তারা নিউইয়র্কের বিভিন্ন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অধিকাংশের বয়স ষাটোর্ধ্ব।

তারা হলেন- তাসনিম নাওয়ার তমা (৩০), আলতাফ হোসেন ননী (৮০), নূর উদ্দিন (৫৪), সাব্বির খান (৬৭), রাশেদা বেগম (৭৫), মোহাম্মদ এ সামাদ (৭৪), কাজী মোস্তফা (৭৭), মোহাম্মদ হক (৮২) এবং মাওলানা মুজাহিদ আলী (৭৮)। তাঁরা প্রত্যেকেই নিউইয়র্কে বাস করতেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট ২৪১ বাংলাদেশির মৃত্যু হলো।

এদিকে নিউইয়র্কে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও সিটি গভর্নর এন্ড্রু কুমো লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৬ জুন পর্যন্ত লকডাউন থাকবে।

জানা গেছে, তাসমিন নাওয়ার তমা নামে এক বাংলাদেশি প্রায় ২৮ দিন আগে অসুস্থ হলে নিউইয়র্ক স্টোনিব্রুক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি প্রতিনিয়ত করোনার সাথে লড়াই করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি। গত ৯ মে রাত ১টা ৪০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন।

মৃতের স্বামী নাজমুস সাকিব জানান, তমার সাথে তিনি ৭ বছর প্রেম করেন এবং ২০১২ সালে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিউইয়র্ক নিয়ে আসেন এবং নিউইয়র্কের লংআইল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। চার বছর আগে কোলজুড়ে আয়দান নামে এক সন্তান আসে। ছোট্ট সুখের সংসার, ভালোভাবেই চলছিল, কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস; তাদের সেই সুখে আঘাত হানে করোনাভাইরাস।

প্রবাসের আঞ্চলিক সংগঠন ‘বিয়ানীবাজার সমিতি’র সাবেক উপদেষ্টা শামসুদ্দিনের বড় ভাই, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের সাবেক সভাপতি মিসবাহ আহমেদের মামা আলতাফ হোসেন ননী মিয়া মারা গেছেন। তিনি গত ৯ মে সন্ধ্যা ৬টায় মাউন সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী নূর উদ্দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর।

নিউইয়র্কের ব্রুকলীনে বসবাসকারী সাব্বির খান করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৯ মে ব্রুকডেল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন কন্যা, ১ ছেলেসহ আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। তার দেশের বাড়ি সিলেটের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের তিলক গ্রামে।

নিউইয়র্কের কুইন্সে বসবাসকারী রাশেদা বেগম করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুইন্সের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি.. রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

নিউইয়র্কের কুইন্সে বসবাসকারী মোহাম্মদ এ সামাদ ৭৪ বছর বয়সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৯ মে ইন্তেকাল করেছেন। নিউইয়র্কে বসবাসকারী কাজী মোস্তফা করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়ছিল ৭৭ বছর।

নিউইয়র্কের কুইন্স প্রবাসী মোহাম্মদ হক করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৯ মে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি পরিবার পরিজন রেখে গেছেন।

নিউইয়র্ক প্রবাসী মাওলানা মুজাহিদ আলী ৭৮ বছর বয়সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া সৌদি আরবে ৬৫ জন, ইতালি ও কুয়েতে ৮ জন করে, কানাডায় ৭ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬ জন, ফ্রান্স ও স্পেনে ৫ জন করে, কাতারে ৪ জন, সুইডেনে ২ জন এবং মালদ্বীপ, পর্তুগাল, কেনিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গাম্বিয়ায় ১ জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মারা গেলেও ওই দুই দেশে ঠিক কতজন বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন, সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সিঙ্গাপুরে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২২ হাজারের বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

সিঙ্গাপুরের পর সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন কাতারে। এ পর্যন্ত দেশটিতে ৩ হাজার বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সৌদি আরবে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশি। এ ছাড়া কুয়েতে ১৭০, ইতালিতে ১৪০, স্পেনে ১০০ এর বেশি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছেই। এই ভাইরাসে সারাবিশ্বে মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি। মোট আক্রান্ত ৪১ লাখ ১ হাজার ৭৭২ জন। এছাড়া সারাবিশ্বে এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়ে ফিরেছে ১৪ লাখ ৪১ হাজার ৭৯১ জন।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন